একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনীর নির্মম গণহত্যা

  • 4 years ago
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম গণহত্যা চালানো হয়। ২৫ শে মার্চের কালোরাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী পরিচালনা করে অপারেশন সার্চলাইট নামক হত্যাযজ্ঞ। যা চলে বিজয় অর্জনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। দীর্ঘ নয় মাসের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের সহায়তাকারী দলগুলো ৩০,০০,০০০ ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। ২,০০,০০০ থেকে ৪,০০,০০০ বাঙালি মহিলাকে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ করে। এছাড়াও, বাঙালি ও উর্দুভাষী বিহারিরা জাতিগত সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। আর বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানীদের এদেশীয় দোসররা সেনাবাহিনীর নির্দেশে বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ জন বুদ্ধিজীবিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে হামলা চালিয়ে ৪৬ জনকে হত্যা করে। ২৫ ও ২৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের তিনজন শিক্ষক ,৩৪জন ছাত্র ও চার জন কর্মচারীকে গুলি করে হত্যা করে হানাদাররা। পরে মাঠে গর্ত করে লাশগুলো পুতে ফেলে। ২৭ মার্চ হানাদার বাহিনী রমনা কালী বাড়িতে অন্তত ৬০ জন নিরিহ বাঙ্গালীকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া ২৯ মার্চ বাঙালী ইপিআর অফিসার ক্যাপ্টেন আজাদসহ ২০ জন ইপিআর সদস্যকে হত্যার পর তাদের গণকবর দেয়া হয়। মোহাম্মদপুরের আদাবরের প্রত্যন্ত পল্লীতে হত্যাযজ্ঞ চলে স্থানীয় আর বুদ্ধিজীবীদের উপড়। এ গণকবরের সন্ধান মেলে ১৯৭২এ। এছাড়াও মোহাম্মদপুর থানার পাশে মিলে আরো ৫টি গনকবরের সন্ধান। মিরপুর রায়েরবাজারের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছিল বধ্যভূমি। ৭১'র ১৮ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে উদ্ধার হয় বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য লাশ। মিরপুরের বসিলার ইটখোলা, শিয়ালবাড়ি, রাইনখোলা, হরিরামপুর, সরকারী বাংলা কলেজে ছিলো টর্চার সেল ও বদ্ধভূমি। মিরপুর ১০নং সেক্টরের ডি ব্লকে অবস্থিত বদ্ধভূমির জল্লাদখানা। এখানকার পাম্পহাউজের প্রায় ৩০ফিট গভীর দুটি ট্যাংকের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় কঙ্কাল। ১৯৯৯ সালের ১৫ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সেনাবাহিনীর সহায়তায় জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে নতুন করে খনন কাজ শুরু হয়। খননের পর এ বধ্যভূমি থেকে ৭০টি মাথার খুলি ও ছোট বড় ৫হাজার ৩'শ ৯২ টি হাড় উদ্ধার হয়। বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ের হরিহরপাড়া গ্রামে হত্যা করা হয় বিশ হাজার নিরপরাধ মানুষ। এছাড়া ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা থেকে বাঙ্গালীদের ধরে এনে নদীর ধারে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। ৭২'র ৮ জানুয়ারী সন্ধান মেলে পুরান ঢাকার জগন্নাথ কলেজ পাকিস্থানী বাহিনীর হাতে শহীদ হওয়াদের গণকবরের। ঢাকার এমএনএ হোস্টেল ছিলো অন্যতম নির্যাতনকেন্দ্র ও বধ্যভূমি। পাকিস্থানী সেনারা গাজীপুর অস্ত্রকারখানা থেকে বাঙ্গালী অফিসারদের এখানে হত্যা করে। ঢাকা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সায়েদাবাদের ধলপুর ময়লা ডিপোতে বিভিন্ন স্থান থেকে আনা লাশ মাটিচাপ দেয়া হয়। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডক্টর হরিনাথ দে’সহ বহু বাঙালীকে হত্যা করা হয় সুত্রাপুরের লোহার পুলে। ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকা জেলার ধামরাই পৌর এলাকা কায়েতপাড়া ও বড়বাজার থেকে তেইশ বাঙালীকে ধরে বংশী নদীর পাড়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করলে। ৫ জন ছাড়া বাকিরা শহীদ হন। একাত্তরে এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পাকিস্তানী হানাদাররা পুরো চট্টগ্রামে নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সদর থানা ছাড়াও রাইজান, বোয়ালখালী, পটিয়ায় হত্যা করে মুক্তিকামী অগণিত নারী-পুরুষ। যার সাক্ষী জেলা উপজেলার ৮৯ টি বধ্যভুমি। ১০ নভেম্বর শুধু নগরীর পাহারতলী বধ্যভূমিতেই ১০ হাজার বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়েছিল। দেশের সব বধ্যভূমির মত চট্টগ্রামের গুলোও সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার; জানালেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।

Recommended