• 4 years ago


কোরআন পড়েছি বহুবার। কিন্তু তেমন কিছুই বুঝি নি, ভেতরে ডুব দিতে পারি নি কখনো। যখন এক নীরব মুহূর্তে কোরআনের গভীরে ডুবে গেলাম, আয়াতগুলো যেন কথা বলতে শুরু করল। শিহরিত, চমকিত হলাম। এক জীবনে যা চাই, তার সবই সাজানো রয়েছে কোরআনের পরতে পরতে। সুস্থ সুন্দর সুখী পরিতৃপ্ত জীবনের জন্যে যা প্রয়োজন, পাতায় পাতায় রয়েছে তারই দিক-নির্দেশনা।

সবকিছু মিলিয়েই জীবন। তাই সমস্যা শরীরের হোক বা মনের, যৌন জীবনের জট হোক বা অর্থনৈতিক জটিলতা, পণ্যের আসক্তি হোক বা প্রবৃত্তির দাসত্ব, ব্যক্তির অসততা হোক বা সামাজিক অবিচার, পার্থিব সুখ হোক অথবা পরকালীন পরিত্রাণ, সব একই সূত্রে গাঁথা। একটাকে আরেকটা থেকে আলাদা করা যায় না। কোরআন এই চিরায়ত সত্যকেই প্রকাশ করেছে সুস্পষ্টভাবে।

‘পড়ো! তোমার সৃষ্টিকর্তা প্রভুর নামে। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন নিষিক্ত ডিম্ব থেকে। পড়ো! তোমার প্রতিপালক মহান দয়ালু! তিনি মানুষকে জ্ঞান দিয়েছেন কলমের। আর মানুষকে শিখিয়েছেন, যা সে জানত না।’ সূরা আলাক-এর এই পঙক্তিমালা দিয়েই কোরআন নাজিলের সূচনা।

ইতিহাস সাক্ষী! কোরআন ছাড়া আর কোনো গ্রন্থই প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে মানুষের হৃদয়ে এত আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে নি, এত দ্রুত মানুষকে এমনভাবে বদলে দিতে পারে নি। কোরআন সরাসরি যাদের সামনে নাজিল হয়েছিল তারাই শুধু আলোকিত হন নি; ধর্মান্ধতা ও পাশবিকতার পরিবর্তে ধর্ম, মানবিকতা ও মুক্তবুদ্ধির এই স্রোত প্রবাহিত হয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্মে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। ধর্ম, মানবিকতা ও মুক্তবুদ্ধির এই স্রোত ইতিহাসের মধ্যযুগে সৃষ্টি করেছিল এক আলোকোজ্জ্বল সভ্যতা।

প্রতিটি মানুষ বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই একটি মৌলিক প্রশ্নের জবাব জানতে চায়। তা হলো, দুনিয়ায় আমি কীভাবে ভালো থাকব? মৃত্যুর পর কোনো জীবন আছে কি? থাকলে সেখানে কীভাবে ভালো থাকব? চৌদ্দ শ বছর ধরে কোরআন থেকে যত বেশি সংখ্যক মানুষ এই প্রশ্নের বোধগম্য জবাব পেয়েছে, আর কোনো গ্রন্থ থেকে সে তা পায় নি। কোরআন তাই কোটি কোটি মানুষের কাছে অনুভূত হয়েছে পরম করুণাময়ের করুণার এক উজ্জ্বল নিদর্শনরূপে।

কোরআন নিঃসন্দেহে আল্লাহর কালাম। নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায়। এর শব্দবিন্যাস, এর ছন্দ, এর সৌন্দর্য, এর ব্যঞ্জনা, এর অন্তর্নিহিত শক্তি, এর গভীরতা অতুলনীয়। তাই আজ পর্যন্ত এর একটি ছোট্ট সূরার সমকক্ষ সূরা কেউ রচনা করতে পারে নি। কোরআন যেহেতু আল্লাহ সরাসরি আরবি ভাষায় নাজিল করেছেন, তাই অন্য কোনো ভাষায় এর মহিমাকে অক্ষুণ্ন রেখে অনুবাদ করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

তবে আন্তরিকতা নিয়ে এর মর্মবাণী অনুধাবন করতে চাইলে যে-কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষেই তা সম্ভব। কারণ ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকল মানুষের হেদায়েতের জন্যেই কোরআন নাজিল হয়েছে। তাই কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহতে সমর্পিত একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আত্মনিমগ্ন হয়ে ধ্যানের স্তরে তাঁর কালামের মর্মবাণী উপলব্ধি করেছি আর বিস্মিত, চমকিত হয়েছি।

আপ্লুত হয়েছি কোরআনের বাণীর চির নতুনত্বকে উপলব্ধি করে। দেখেছি বর্তমান যুগের প্রতিটি যন্ত্রণা ও প্রতিটি জিজ্ঞাসার জবাব এক চমৎকার গাঁথুনিতে গাঁথা আছে। স্পষ্টত অনুভব করেছি চৌদ্দ শ বছর আগে অধঃপতিত অবিদ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষগুলো এই কোরআনের বাণীর মর্মার্থ অনুধাবন ও তা অনুসরণ করে নিজেদেরকে পৃথিবীর সেরা মানুষে রূপান্তরিত করেছিলেন, আলোকোজ্জ্বল সভ্যতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

একইভাবে যে-কোনো বঞ্চিত, অবহেলিত বা অধঃপতিত মানুষ যদি কোরআনের মর্মবাণীকে অনুধাবন করতে পারে, অনুসরণ করতে পারে, তাহলে সে-ও পরিণত হবে যথার্থ মানুষে, সফল মানুষে, আলোকিত মানুষে। আর এই মানুষেরাই হবে ভবিষ্যৎ আলোকোজ্জ্বল সভ্যতার নির্মা

Category

📚
Learning

Recommended